কত রকম করা যায় তার কি ইয়ত্তা আছে ?
ডালডা জাতীয় জিনিষ তৈরী করা যায়, কলার ডেগো থেকে লবন করতে পার। নানারকম ফল যা পাওয়া যায়, তা থেকে রকমারি সিরাপ করতে পার। খুব ছোট্ট ধরনের কল করা যায়, যাতে কাপড়, গামছা, রুমাল ইত্যাদি তৈরী হতে পারে। ঐরকম কল হাজারখানেক টাকার মধ্যে বাড়ীর একখানা ঘরের মধ্যে চালু করা যায়। ছোট তেলের কল করা যায়Ñ ঘানির পরিবর্ত্তে। এইসব লাভজনকভাবে করতে গেলে ইলেক্ট্রিসিটি সহজপ্রাপ্য করে তোলা লাগে। নানারকম ফল যেমন কমলা, আম, কাঁঠাল ইত্যাদির রস জমিয়ে candy (মিছরি) জাতীয় জিনিস তৈরীর করা যায়। সোডা ওয়াটার তৈরীর কল, লজেন্স তৈরীর কল ইত্যাদি চালান কঠিন কিছু না। মালগুলিও চালু করার ব্যবস্থা করা দরকার। দৈনন্দিন প্রয়োজনে যা লাগে, তেমনতর জিনিস তৈরী করলে খরিদ্দারের অভাব হয় না। ব্যবস্থা করতে গেলে পাকা ব্যবসায়ীর আওতায় থেকে বাস্তব অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে হয়। ফেন্ বিজ্ঞানের ছাত্র আছে, ওর সঙ্গে যুক্তিবুদ্ধি করে বের করা লাগে,Ñকুটিরশিল্পের উপযোগী ছোট-ছোট যন্ত্রপাতি কি-কি উদ্ভাবন করা যায়।
শুধু হাতে পারবে না। ছোট-ছোট যন্ত্রের উদ্ভাবন যদি করতে পার, তাহলে অসুবিধা হবে না।….. ফিতে ও সূতো করার মেসিন তৈরী করা যায়। মোজার কল, গেঞ্জির কল ইত্যাদি তো খুব সহজ ব্যাপার।
রেড়ির তেল, রয়নার তেল, চালমুগরার তেল, নিম-তেল ইত্যাদি করা যায়। গার্হস্থজীবনে ব্যবহারের উপযোগী ছোটখাট oil expeller (তৈল নিষ্কাশক) করতে হয়। Diffrential pulley (পার্থক্যসূচক কপিকল)-এর arrangement (ব্যবস্থা) করা লাগে।…… গোলাপ, বকুল, রজনীগন্ধা, বেলী, যুঁই, চাপা ইত্যাদি ফুল থেকে আতর করা যায়। পাঁচ বিঘা জমিতে ফুলের চাষ করে এই সব যদি করা যায়, সে একটা জমিদারীর মত হয়। শুনেছি ফ্রান্স, বেলজিয়াম, বুলগেরিয়া ইত্যাদি জায়গায় করে। সয়াবিন, মাষকলাই, নারকেল, চিনেবাদাম ইত্যাদি থেকে উদ্ভিজ মাখন, ননী প্রভৃতি তৈরী করা যায়। তেল থেকে স্টিয়ারিক এ্যাসিড ও গ্লিসারিন হতে পারে।…… যন্ত্রপাতি যেমন দিতে হয়, কাঁচামালও তেমনি সরবরাহ করতে হয়। কাজের দায়িত্ব দিয়ে হাতেকলমে সাহায্য করে উপযুক্ত সময়ে করিয়ে নিতে হয়। যা করলো তা বিক্রীর ব্যবস্থা করে কিছু তাকে দিতে হয় আর কিছু যন্ত্রের দাম বাবদ কেটে রাখতে হয়। এইভাবে ধীরে-ধীরে দামটা দেওয়া হয়ে গেলে যন্ত্রটা তার হয়ে যাবে। মানুষ যে পারে, এই বিশ্বাসটা তার ভিতর গজিয়ে দিতে হবে। বাড়ী বসে হাতেকলমে করে যদি দুপয়সা রোজগার করতে পারে, তাতে স্ফুর্তি বেড়ে যাবে। কাজে উৎসাহও পাবে।
মানুষকে চাকরী করে দেওয়া এক জিনিষ আর স্বাবলম্বী করে দেওয়া অন্য জিনিষ। চাকরী গেলে আবার সে আগের মত বেকার। কিন্তু স্বাবলম্বী হওয়ার শিক্ষা যে লাভ করে, সে মাথা খাটিয়ে একটা-না-একটা কিছু করে দাঁড়াতেই পারে।…….তুমি যে ঘাসলতাপাতা দিয়ে ইঞ্জিন চালাবার চেষ্টা করেছিলে , সেটা হলে power (শক্তি) খুব cheap (সস্তা) হয়ে যায়, তাতে কাজের সুবিধা হয়। ……. ভাল করে লাগলে কুটির-শিল্প দিয়ে সারা দেশের প্রয়োজন মেটান যায়। অপরিহার্য প্রয়োজনের ক্ষেত্রে ছাড়া বিরাট্-বিরাট্ কল-কারখানা করা ভাল না। যন্ত্রের বিরোধী আমি নই, কিন্তু আমি বলিÑ গার্হস্থ্য যন্ত্র যত বেশী হয় ততই ভাল। আর ঘরে-ঘরে বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা হোক, যাতে যন্ত্রগুলি তার সাহায্যে চালান যায়। Biological evolution of culture and efficiency (কৃষ্টিগত ও দক্ষতার জীববিদ্যাসম্মত বিবর্ত্তন)-এটাই হলো আর্য্যদের বৈশিষ্ট। তাই বংশগত নৈপুণ্যের সঙ্গে খাপ খাইয়ে তেমনতর গার্হস্থ্য শিল্পের প্রবর্তন করতে হবেÑপারিবেশিক প্রয়োজন-পূরণে লক্ষ্য রেখে।
মানুষের আত্মবিশ্বাস, বৈশিষ্ট ও যোগ্যতা জাগিয়ে দেবার মত সেবা আর নেই। আমরা কাজে লাগাতে জানি না, তাই বহু মানুষ অকেজো হয়ে থাকে। চালালে চলার মত ক্ষমতা বেশির ভাগেরই আছে।
এরপর বোতাম, বকলস্, চশমার ফ্রেম, ব্রাশ, চিরুণী, কাঠের খেলনা, মহিষের শিং-এর জিনিসপত্র, ফাউন্টেনপেন ইত্যাদি তৈরী করার কথা হলো।
প্রথমে আমি ফাউন্টেনপেন তৈরী করেছিলামÑ কঞ্চির সামনে শোলা দিয়ে আটকে নিব দিয়ে। প্রথমে দেখি কালি পড়ে না। তারপর একটা ফুটো করে কালি পড়ার ব্যবস্থা করি। তখন আমি পাঠশালায় পড়ি।
টাকা জোগাড় করতে হয়। তারপর উপযুক্ত লোক রেখে resecherch (গবেষণা) চালাতে হয়, যন্ত্রপাতি তৈরী করতে হয়। ঘোরাফেরা, খাটা, দেখাশোনা, বিবেচনা, গবেষণা, আবিষ্কার ইত্যাদি করা, লোকের পেছনে লেগে থেকে তাদের ভিতর আর্থিক সচ্ছলতা এনে দেওয়াÑ ইত্যাদির জন্য ইষ্টপ্রাণ, দরদী, বুদ্ধিমান, বিচক্ষণ ও পরিশ্রমী লোকের প্রয়োজন।
এক-এক group (দল) যদি এক-একটার জন্য বিশেষভাবে responsible (দায়িত্বশীল) থাকে, তবে অসুবিধা হবে না। কর্ম্মী বাড়াতে হবে, আর যারা আছে তাদের more vigorously (আরো জোরের সঙ্গে) চলা লাগবে। দোষ আমাদের । ইঞ্জিন যদি জোরে চলে, গাড়ীগুলিও সেই সঙ্গে চলে। (আলোচনা প্রসঙ্গে Ñ৮ম খ-), ১৯শে আষাঢ়,১৩৫৩ (ইং ৪/৭/১৯৪৬)Ñ২৭শে আষাঢ়, ১৩৫৩ (১২/৭/১৯৪৬)