শুরু হয়েছে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের ১৩৭ আবির্ভাব-বর্ষ-স্মরণ মহোৎসব

সুশান্ত কুমার সরকার :
“দীক্ষা নিলে জানিস্ মনে — ইষ্টভৃতি করতেই হয়, ইষ্টভৃতি-বিহীন দীক্ষা — কভু কি রে চেতন রয় ?” “এক আদেশে চলে যা’রা, সমাজ গড়ায় জানিস্ তা’রা ।” “বাঁচা বাড়ার মর্ম যা, ঠিকই জানিস্ ধর্ম তা” শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের এমন অসংখ্য বাণী হৃদয়ে ধারণ করে দেশের দূরদূরান্ত থেকে আগত হাজার হাজার ভক্তবৃন্দ প্রচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে পাবনার হিমাইতপুর।
আজ বৃহস্পতিবার থেকে পুণ্য দোল-পূর্ণিমা তিথিতে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের ১৩৭তম শুভ আবির্ভাব-বর্ষ-স্মরণ মহোৎসব শুরু হচ্ছে। গতকাল বুধবার থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সৎসঙ্গী এবং ঠাকুর ভক্তবৃন্দ আসতে শুরু করেন। আগামী তিনদিন ব্যাপী চলবে এই উৎসব।
তিন দিনের অনুষ্ঠানর প্রথম দিন আজ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি থাকবেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের এ্যাডভাকট ব্যারিষ্টার মোহাম্মদ শিশির মনির। বিশেষ অতিথি থাকবেন পাবনা ইসলামীয়া মাদ্রাসা, দারুল আমান ট্রাস্টের অধ্যক্ষ ইকবাল হোসেন, পাবনা জেলা ও দায়রা জজ আদলতের অতিরিক্ত পিপি এ্যাড. মলয় কুমার দাসরায়, পাবনা প্রেস ক্লাবের সম্পাদক জহুরুল ইসলাম, বিশিষ্ট সমাজ সেবক মোসাব্বির হোসন সঞ্জু। এছাড়াও ধর্মীয় আলোচকবৃন্দ আলোচ্য বিষয়ের উপর আলোচনা করবেন।
উৎসবের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি থাকবেন বিআইডব্লিউটিএ এর সাবেক চেয়ারম্যান ও এবি ট্রাস্টের চেয়ারম্যান এ্যাড. শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। বিশেষ অতিথি থাকবেন পাবনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মফিজুল ইসলাম, পাবনার পুলিশ সুপার মো: মোরতোজা আলী খাঁ, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ পাবনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শ্রী বিনয় জ্যোতি কুন্ডু, বাংলাদোশ পূজা উদযাপন পরিষদ পাবনা জেলা শাখার সভাপতি শ্রী প্রভাস ভদ্র। এছাড়াও ধর্মীয় আলোচকবৃন্দ আলোচ্য বিষয়ের উপর আলোচনা করবেন।
আয়োজকরা জানান, তিন দিন ব্যাপী মহাৎসবের অনুষ্ঠানমালায় থাকছে ধর্মসভার পাশাপাশি ঊষালগ্ন মাঙ্গলিকী, তারকব্রহ্ম নাম সঙ্কীর্তন, সকাল-সন্ধ্যা বিরতিহীন নাম-ধ্যান, প্রভাতে এবং সন্ধ্যায় সমবেত প্রার্থনা, সদ্গ্র্ন্থাদি পাঠ, ভক্তি সংগীত, শুভ অধিবাস, বিশ্বকল্যাণে বিশেষ প্রার্থনা, পুরুষোত্তমের শুভ সপ্তত্রিংশতী-উত্তর শততম জন্মলগ্নের স্মতিচারণ, (পুরুষোত্তমের দিব্য তনু স্মরণ ৮১ বার পুষ্পাঞ্জলি, প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, শঙ্খধ্বনি, পুরুষোত্তম প্রণাম ও অর্ঘ্যাঞ্জলি নিবেদন), জাতীয় সঙ্গীত সহযোগে জাতীয় পতাকা ও মাতৃবন্দনা সহযোগে সৎসঙ্গ পতাকা উত্তোলন, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দোলযাত্রা, লীলাকীর্ত্তন, শ্রীশ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর ৫৪০ তম আবির্ভাব পুণ্যলগ্নের স্মতিচারণ, শ্রীশ্রীঠাকুরের জন্মস্থান প্রদক্ষিণ, ঋত্বিক পরিষদ সভা, যুব সম্মেলন, ঋত্বিক সম্মেলন, কিশোরমেলা, মাতৃ সম্মেলন, কর্মী সম্মেলন, আনন্দবাজারে মহাপ্রসাদ বিতরণ ও রাতে লোকরঞ্জন অনুষ্ঠান।
তিন দিনের এই উৎসবের প্রধান আকর্ষণ ধর্মসভা। যার আলোচ্য বিষয় থাকবে- “দোল-দীপালীর প্রাণনদীপনায় পরমতীর্থ”, “সৎসঙ্গ নিবন্ধনের শতবর্ষ উদযাপনে সাংগঠনিক কর্মসূচি প্রণয়ন”, “নিবন্ধনের শতবর্ষে সৎসঙ্গের ভূমিকা” ও “বাঁচা বাড়ার মর্ম যা, ঠিকই জানিস্ ধর্ম তা”।
তিনদিন ব্যাপী উৎসবের রাতে লোকরঞ্জন অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করবেন বাউল শিল্পী শ্রী রথীন মিত্র, বাউল শিল্পী নিতু বালা এবং বিভিন্ন জেলা থেকে আগত সৎসঙ্গী শিল্পী বৃন্দ।
সৎসঙ্গ কন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্রীতাপস চদ্র বর্মণ জানান, শান্তিপূর্ণভাবেই শুরু হয়েছে এবার দোল উৎসব। দেশের দূর দুরান্ত থেকে সৎসঙ্গী আসছেন। এবারের তিন দিনের অনুষ্ঠানে প্রায় এক লক্ষ ভক্ত সমাগম হবে বলে আশা করছি। ঠাকুরের কৃপায় সুন্দর ও সুষ্ঠুভাব উৎসব পালিত হব বলে মনে করছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং স্থানীয় বাসিন্দারা আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করছেন।
এদিকে উৎসবকে ঘিরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তিন দিন ধরেই পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব এবং সেনাবাহিনীর টহল থাকবে।
পাবনা সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম বলেন, শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের আবির্ভাব উৎসবকে ঘিরে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বচ্চো নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সাধারণ পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকের পুলিশ থাকবেন। এছাড়াও র‌্যাব, সেনাবাহিনী, ডিজিএফআই, এনএসআইসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সদস্যরাও থাকবেন নিরাপত্তার দায়িত্বে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *