আলোচনা-প্রসঙ্গে : উনবিংশ খন্ডের কিছু অংশ

শ্রীশ্রীঠাকুর সকালে যতি-আশ্রমের বারান্দায় ব’সে কয়েকটা বাণী দিলেন।

এরপর প্যারীদা (নন্দী) শ্রীশ্রীঠাকুরকে এসে বললেন- কোলকাতায় আমি যে ওষুধের কথা লিখেছিলাম, তা’ ঠিক লেখা সত্ত্বেও ওরা জানিয়েছে যে আমি ভুল লেখার জন্য ওরা ওষুধ পাঠাতে পারেনি। সব বেলায় যত দোষ আমার।

শ্রীশ্রীঠাকুর- মানুষ না পেরে দোষ দেয় ভগবানকে। তুই চটিস্্ কেন? তোর উপদোষ দিয়ে ওরা বাঁচতে চায়।

প্যারীদা এই কথা শুনে প্রসন্ন বদনে বললেন- আমিও তো দোষ থেকে বাঁচতে চাই, কিন্তু যেখানে দোষ দেখি না, সেখানে দোষ শোধরাব কিভাবে? তা’ সত্ত্বেও অন্যে দোষ দিলে তাকেই বা বোঝাব কিভাবে?

শ্রীশ্রীঠাকুর- তোর তা’ দিয়ে কাজ কী? তুই ভগবানের কোলে থাক্।

প্যারীদা হাসিখুশি মনে বিদায় নিলেন।

শ্রীশ্রীঠাকুর সন্ধ্যায় যতি-আশ্রমে উপবিষ্ট। ব্রহ্মানন্দদা জিজ্ঞাসা করলেন- মুসলমানরা কি হিন্দুদের থেকে বেশী কুটনীতিক?

শ্রীশ্রীঠাকুর-হিন্দুরা অসাধারণ কুটনীতিক। কিন্তু সংহতি না থাকায় কীব হ’য়ে গেছে।

শ্রীশ্রীঠাকুর আধুনিক মেয়েদের অনেকের চাল-চলন সম্বন্ধে বললেন- ওরা যেভাবে সেজেগুজে রুমাল হাতে কায়দা ক’রে চলে তা’ দেখে আমার ভয়-ভয় করে। ওদের রকম দেখে মনে হয়, যে কোন সময় প্রলোভনের শিকার হ’য়ে পড়তে পারে। যাদের নিষ্ঠা থাকে, তারা পরাক্রমী হয়। তাদের চলন যতই শান্ত হোক্ না কেন, তাদের কাছে সহজে কেউ এগুতে সাহস পায় না।

কেষ্টদার সঙ্গে কথাপ্রসঙ্গে শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন- আমি চাই, সৎসঙ্গ দেশের আমূল রূপান্তর নিয়ে আসুক। ভারত আবার সোনার ভারতে পরিণত হোক। নিজেরা ছোটখাট একটা (Institution) (প্রতিষ্ঠান) ক’রে খেলাম, দেলাম, শান্তিতে থাকলাম, সেটা কোন বড় কথা নয়। দেশের দূরবস্থা মোচনে আমাদের একটা দায়িত্ব আছে। তার জন্য কর্ম্মীদের মনে একটা উদ্বেগ লেগে থাকা চাই। সেই উদ্বেগই মানুষের যোগ্যতা বাড়িয়ে তোলে। প্রকৃত কর্ম্মী যে, সে প্রতিমূহূর্ত্তে ভাবে তার সব চলাটা আদর্শ পরিপুরণের সহায়ক হচ্ছে কিনা। আলোচনা-প্রসঙ্গে (উনবিংশ খন্ড) পৃষ্ঠা- ১৬৩-১৬৪ : ১৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৩৫৭, মঙ্গলবার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *